Saturday, September 7, 2013

নীরবে হারিয়ে যাওয়া



আজ প্রথম কলেজে যাবে তুহিন, বরাবরের মত এবারো তুহিন চুপচাপ কারণ তুহিনে কোন কিছুতেই খুব একটা আনন্দ নেই, তার মানে এই নয় যে সে আনন্দ করে না । আসলে তুহিন নীরবতা কে ভালোবাসে অনেক বেশী তাই সে একা থাকে, তার নিজের পৃথিবীতে স্বপ্ন, ভালো লাগা, পছন্দ, অপছন্দ সব কিছুই মনে হয় তুহিনের মত নীরব তাই আজ কলেজের প্রথম হলেও সে তার মতই আছে। যাচ্ছে কলেজের দিন গুলো আস্তে আস্তে দু একজন করে ভালো একটা বন্ধুতের পরিবার হয়ে গেছে তুহিনের এখন, এখন কারিম, শিমুল, আজিজ, সুজন, রাসেল এক দুটা মেয়ে বন্ধুও আছে এখন শম্পা আর মৌসুমি ভালোই আড্ডা ক্লাস সব কিছু মিলিয়ে তুহিনের জগতটা একটু অন্য রকম হয়ে গেছে । দেখতে দেখতে কলেজের বছর শেষ হয়ে গেল। এখন সবাই একজন একজন কে বুঝে বন্ধুদের বন্ধন অনেক শক্ত এখন সারা দিনে অন্তত সবাই সবার খোঁজ নেয় ।
তুহিন একজন সাংবাদিক তার আরও একটি পরিচয় হলো সে অনেক ভালো কবিতা ও গল্প লিখে যদিও তার কবিতা গুলো তার ডাইরি পাতার নিচে পরেই প্রতিদিন হাজার বার মারা যায় তবুও সে লিখে, বন্ধুরা বলে দেখিস তুই একদিন অনেক বড় কবি হয়ে যাবি, সেদিন আবার ভুলে যাবি না তো ?? আরে কিসের ভালো লিখি আর কেউ চিনবে না আমায় তাই তোদের ভুলা হবে না কোনদিন বুঝলি কিন্তু তোরা আমায় ভুলে যাস না তুহিন এমন করেই বলে।
তুহিনের সেদিনও কলেজে বসে আসে হঠাৎ করেই কে যেন পিছন থেকে এসে জানতে চাইলো কোন এক ডিপার্টমেন্টের কথা, তুহিন দেখিয়ে দিলো। বুঝতে পেরেছে হযতো এই এই কলেজে নতুন এই মেয়েটি
সারাদিন পর তুহিন যখন বের হবে করেজ থেকে আবার সামনে এসে পরল সেই সকালের মেয়েটি তবে এবার কোন কিছু জিজ্ঞেস করতে নয় ধন্যবাদ দিতে, আসলে আমি দুঃখিত সকালে আপনাকে ধন্যবাদ না দিয়েই চলে গিয়েছিলাম আমি মনালিসা আজই প্রথম এখানে, বলতে পারেন ১ম ইয়ার, ওহ আচ্ছা আমি তুহিন ২য় ইয়ার,পরিচিত হয়ে ভালো লাগলো, তো ঠিক আছে আমি তো এখন বের হবো আমার ক্লাস নেই, আমিও তো বের হল চলুন এক সাথে হাঁটতে হাঁটতে বের হই।
মাঝে মাঝে মনালিসা সাথে কথা হয় তুহিনের কোন ছোটখাট দরকার পরলেই তুহিনের কাছে ছুটে আসে মনালিসা, একটা ছোট বন্ধুত্ব হয়ে যায় তুহিনের সাথে। কথা বলতে বলতে আপনি থেকে তুমি।
আধুনিকতার আর এক ধাপ ফোন , হ্যাঁ মাঝে মাঝে রাতে কথা বলে দুজনে আর সারাদিন আড্ডা হয কলেজে, তুহিনের বন্ধুরা মাঝে মাঝে বলে কিরে তুই কি মনালিসা কে নিয়ে কাব্য রচনায় ব্যস্থ নাকি? আরে না ও মাঝে মাঝে আড্ডা দিতে আসে আমার এখানে, অন্য কিছু নয়।
বন্ধুদের কথা গুলো যে তীরের মত করে তুহিনের হৃদয় কে ছুয়ে গেছে, তবে কি সত্যিই তুহিন মনালিসা কে নিয়ে অন্য কিছু ভাবতে শুরু করেছে?? হয়তো ভালোবাসাটাই এমনই, কখন কার হৃদয়ে জন্মনেয় কেউ জানে না, সেদিন বিকালে তুহিন আর মনালিসা বসে কথা বলছে হঠাৎ করেই মনালিসা তুহিনের ডাইরি টা খোলে দেখে একটা ছোট্ট কবিতা লেখাঃ-
যেদিন প্রথম তোমায় দেখেছিলাম
জানি না এ হৃদয়ে কেন দোলা দিয়েছিল
ভাবিনি কোনদিন তোমার এত কাছে আসবো
ভালোবেসে তোমার হাতে হাত রাখবো
বাহ অনেক সুন্দর তো কার জন্য তুহিন?? আরে কারো জন্য না এমনি লিখলাম। তুহিন বলে ইশশ কেউ যদি আমার জন্য লিখত এমন করে , তুহিন যদি আমি লিখি যদি বলি তোমার জন্যই এই লেখা তুমি কি হাতে হাত রাখবে আমার?? মনালিসা আমি হাতে হাত রাখবো বলেই তো তোমার এত কাছে যা তুমি এত দিন বুঝনি, তুহিনের নতুন পৃথিবী মনালিসা কে নিয়ে। তুহিনের ছন্দহীন কবিতা গুলো এখন রঙ্গিন , এখন তুহিন অন্য এক পৃথিবী সাজিয়েছে যেখানে শুধুই মনালিসার বসবাস, বেশ ভালোই কাটছিল সম্পর্কের অনেক গুলো দিন, কিন্তু বেশ কিছু দিন পরে আস্তে আস্তে মনালিসা বদলে যেতে থাকে, মনালিসার পৃথিবী থেকে তুহিনের চিহ্ন গুলো মুছে যেতে থাকে , তুহিন বুঝতে পারে সে একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছে মনালিসার জীবন থেকে, সে আর আগের মত নেই, অনেক বার তুহিন মনালিসার কাছে জানতে চেয়েছে কেন মনালিসা হারিয়ে যেতে চায়, প্রতিবাবের মত একই উত্তর আমি আসলে সম্পর্ক রাখতে চাই না , কিন্তু কেন ?? উত্তর টা অজানাই থেকে গেছে তুহিনের তার বেশ কিছু দিন পর হঠাৎ করেই তুহিনের ফোনে মনালিসা একটা মেসেজ আসে যেখানে লেখা ছিল

“তুহিন আমায় ক্ষমা করে দিও আজকের পর থেকে হয়তো তুমি আর আমাকে পাবে না কোনদিন কারণ আমি আমার পরিবারের ইচ্ছায় আজ দেশের বাহিরে চলে যাচ্ছি তুমি যখন এই মেসেজ পাবে আমি তখন অনেক দূরের পথিক । বলতে কষ্ট হচ্ছে তবুও আমার রিলেটিভের সাথে ওখানে আমার বিয়ে”

তুহিন বাক্যহীন ! এই কি ছিল তার প্রথম ভালোবাসা?? আজ তুহিন নিথর, শুধু অন্ধকার ঘর নয়। কিছু খারাপ বন্ধুদের সাথে মিলে তার জগতও অন্ধকার, যেখানে নেশা করে এমন হাজারো তুহিন পড়ে আছে আর নিজেকে ধ্বংস করে দিচ্ছে কোন এক মনালিসার জন্য ।
অনেক বছর পর মনালিসা দেশে এসেছে আজকে, হঠাৎ করেই পুরনো কিছু বন্ধুর খোঁজ করে , পেয়ে যায় অনেক কে, সবার খোঁজ খবর নেয় কিন্তু তুহিনের কোন খবর নেয়নি , পর দিন বিকালে সে তুহিনের চলে যায় হয়তো সামনে থেকে ক্ষমা চাইবে বলেই, কিন্তু আজ তুহিনদের বাড়িতে এত মানুষ কেন? তুহিনের সব বন্ধুরাও আছে, একটু সামনে যেতেই তুহিনের এক বন্ধু শুধু বলল মনালিসা তুমি! তুহিন তো আজ মারা গেছে তুমি জানো ? চোখে পড়লো তুহিনকে শুয়ে আছে আছে সাদা একটা কাফনে, মুড়িয়ে রেখেছে তাকে , মনালিসা কে আর ক্ষমা চাইতে হবে না, হয়তো তুহিন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগেই এমনি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে কারন তুহিন যে তাকে সত্যিই ভালোবাসতো । আজ মনালিসার চোখে অশ্রু , কিন্তু এই অশ্রু গুলোই কি সবকিছু ?? এই আবেগি কিছু অশ্রুই কি একটা ভালোবাসার শেষ পরিনতি ??
এই প্রশ্ন এমন হাজারো মনালিসার কাছে
কাররো জীবনের সাথে এই গল্পের কোন মিল থাকলে দুঃখিত। কারন গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক

1 comment:

Anonymous said...

গল্পটা পড়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না গল্পটা কাল্পনিক হলেও একেবারে বাস্তব